কোরিয়ার থেকে আমদানি করা ৩০ টি হুন্দাই ইঞ্জিন এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে
- সর্বশেষ হালনাগাদ : 01:06:41 pm, Saturday, 30 November 2024
- / 524 Read Count
এম আর আমিন, চট্টগ্রাম
দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় গণপরিবহন রেল লোকসান আর একে অপরের হাত ধরে তাদের পথচলা যেন যুগ-যুগের। ,বাংলাদেশ রেলওয়ের লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) সংকট কাটাতে কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম থেকে আমদানি করা আধুনিক ৩০ টি ইঞ্জিন এখন রেলের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২ বছর যেতে না যেতেই নষ্ট হয়ে অচল হয়ে পড়েছে। যা মেরামত করার সক্ষমতা বাংলাদেশে রেলওয়ের নেই। ১১৪৮ কোটি ২০ লাখ টাকার এসব ইঞ্জিন নিয়ে বিপাকে পড়েছে সরকারি সেবামূলক এই সংস্থাটি। না পারছে গিলতে না পারছে ফেলতে অবস্থা বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক বিশ্বস্ত সুত্র এই তথ্য জানিয়েছে।
সুত্র জানায়, কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম থেকে ২০২১ সালে আমদানি করা ইঞ্জিনের লাইফ টাইম ২০ বছর ধরা হলেও মাইনর এক্সিডেন্টের ফলে ইতিমধ্যে ৫টির ঠিকানা হয়েছে হাসপাতালে (ডিজেলশপ)। এরমধ্যে স্পেয়ার পার্টস দুস্প্রাপ্যতা ও কারিগড়ি অজ্ঞতার কারনে কেলকাতে থাকা ২টি ইঞ্জিন সচল করার সম্ভাবনা নেই। আর চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে থাকা ৩টি ইঞ্জিনের ত্রুটি সারাতে চেষ্টা চলছে। তবে পার্টস পাওয়া যাচ্ছেনা।
আবার ১০ টি ইঞ্জিনের ৪টি মোটরের মধ্যে ২টি করে মোটর নষ্ট হয়ে গেছে, ফলে ২টি মোটর নিয়ে ফুল স্পীড নিয়ে চলতে পারছেনা। কোথাও লাইন একটু উচু হলে রাস্তায় থেমে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। ব্রীজ অতিক্রম করতে বেগ পেতে হচ্ছে। বাকি ১৫টা কোনরকমে চলছে। এসব ইঞ্জিন নতুন টেকনোলজির হওয়ায় এগুলোর কাজ করার মতো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রকৌশলী রেলে নেই। অথচ পুরাতন অনেক ইঞ্জিন আছে যার বয়স ৪০ বছর হলেও এখনো ভালোভাবেই চলছে।
এসব বিষয় নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীস্থ ডিজেলশপের কর্মব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এতেসাম মো. শফিক বলেন, কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম থেকে ৩০ টি ইঞ্জিন আমদানিতে কর্তৃপক্ষের ভুল ছিল। যেহেতেু এই টেকনোলজিটা নতুন, তাই এগুলো পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করার মতো অভিজ্ঞতা আমাদের টেকনিশিয়ানদের নেই। তাদের উচিৎ ছিল আগে টেকনিশিয়ানদের পর্যাপ্ত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা।
কিন্তু তারা তা না করে অফিসারদের নিয়ে বিদেশ সফর করেছে, যা পরিচালনায় কোন কাজে আসবেনা। একেকটা ইঞ্জিনের জন্য আমাদের ৬টি ডিপার্টমেন্ট কাজ করে আর এই ৬টি ডিপার্টমেন্টে থেকে কমপক্ষে একজন করে টেকনিশিয়ান বা প্রকৌশলীকে ট্রেনিং করানো উচিত ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি। ফলে পরিচালনা বা মেরামতের কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোকের সংকট। ছোটখাট ত্রুটিও মেরামত করা যাচ্ছেনা।
তবে এগুলো মেরামতের জন্য ৩ বছরের ওয়ারেন্টি আছে। শর্ত অনুযায়ী তারা মেরামত করে দেয়ার কথা। আমরা আমাদের সমস্যার কথা তাদেরকে জানিয়েছি। শীপমেন্ট জটিলতার অযুহাতে তাঁরা এখনো প্রস্তবনা পাঠাতে পারেনি। কবে নাগাদ পাঠাবে আর তারা এসে কাজ করবে তা অনিশ্চিত। প্রস্তাব পৌছাতে পৌছাতে ওয়ারেন্টির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাও হয়ে যেতে পারে। তখন এগুলো নিয়ে আমরা বিপদে পড়ে যাব। আর এসব ইঞ্জিনের পার্টসগুলো তাদের কাছে ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যায়না। তাই বাধ্য হয়েই আমরা তাদের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
অপর একটি সুত্র জানায়, কোনরকম ফিজিবিলিটি স্টাডি না করেই মোটা অংকের কমিশন হাতিয়ে নেয়ার জন্য তরিঘরি করে এই ইঞ্জিনগুলো ক্রয় করা হয়েছে। সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বিষয়টি হ্যান্ডেল করেছেন। প্রকৌশলীদের মতামতকে পাত্তাই দেননি তিনি। এমনকি পিডিকে পর্যন্ত কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। মন্ত্রীর একগুয়েমির সাথে তাল মিলিয়েছেন তৎকালীন ডিজি। জ্বি হুজুর, জ্বি হুজুর টাইপের অফিসারদের জন্য রেল আজকে এই বিপদের মুখোমুখি হয়েছে।
সুত্র জানায় রেলের লোকেমোটিভ সংকট কাটাতে কোরিয়া থেকে ৩০ টি মিটারগ্যাজ ইঞ্জিন আমদানি করা হয়। যার সিরিজ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০১ থেকে ৩০৩০ পর্যন্ত। ২০১৮ সালের ১৭ মে এস ইঞ্জিনগুলো কিনতে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেমের সঙ্গে চুক্তি করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে ২৯৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রথম ধাপে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আনে ১০টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন)। পরে আরেকটি প্রকল্পে ৮৪১ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে আরো ২০টি লোকোমোটিভ কেনা হয়।
এব্যপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, হুন্দাই রোটেমের কয়েকটি লোকোমোটিভ /ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গেছে, মেরামতের কাজ চলছে। ঠিক হলেই বহরে সংযুক্ত করা হবে।
এব্যপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেন্ডেন্ট (সিওপিএস) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রচুর ইঞ্জিন সংকট রয়েছে, ভেবেছিলাম সংকট লাঘবে হুন্দাইয়ের ইঞ্জিনগুলো অনেকটা কাজে দিবে। কিন্তু এখন দেখছি এসবের অনেকগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।