প্রয়োজনে জীবন দেব কিন্তু এক ইঞ্চি মাটি হায়েনাদের হাতে ছেড়ে দেব না: জামায়াত আমির
- সর্বশেষ হালনাগাদ : 01:03:06 pm, Saturday, 30 November 2024
- / 523 Read Count
এসএম শহীদুল ইসলাম, সাতক্ষীরা
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, যারা দেশকে ভালোবাসে তারা দেশ ছেড়ে পালাতে পারে না। আমরা এদেশে জন্ম নিয়েছি, এদেশেই মরবো। এ দেশকে আমরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশে পরিণত করব। বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে যুবসমাজ। বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী কারোর উপর জুলুম করবেনা।
তিনি আরো বলেন, কুরআনের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে, আল্লাহর দ্বীনের পথের কথা বলতে গিয়ে, মজলুম জনতার পক্ষে কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশের কোন জেলায় এত বেশি জীবন ও রক্ত উপহার দেয়নি। এজন্য সাতক্ষীরার অবস্থান বাংলাদেশজামায়েতে ইসলামীর কাছে এক অনন্য উচ্চতায়। এজন্য আল্লাহতালার কাছে দোয়া করি, আল্লাহ তায়ালা যেন ক্রমাগতভাবে এই জেলার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।
আমিরে জামায়াত ডাক্তার শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় জন্মভূমি। এমন সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা দেশ পৃথিবীর কম মানুষই পেয়ে থাকে। আমরা এমন একটি দেশ পেয়েছি, যার মাটির উপরে অফুরন্ত সম্পদ। মাটির গর্ভেও অফুরন্ত সম্পদ।সমুদ্রগর্ভেও অফুরন্ত সম্পদ। আমাদের এই সম্পদগুলো জনগণের উপকারে আসছে না। যারা জনগণের কর্তা হয়ে বিভিন্ন সময় দেশ শাসন করেছেন, জনগণের সম্পদ সুকৌশলে চুরি করে তারা তাদের পকেটে ঢুকিয়েছেন। এইজন্য বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রাপ্য হিস্যা পায়নি।
সুষম উন্নয়ন হয়নি। ২০১৫ সালের দিকে কোন এক রমজানে আমি ঈদ উদযাপন করতে এসেছিলাম এই জেলার শহীদ পরিবারদের সাথে। সকাল ১০ টা থেকে রাত সাড়ে নটা পর্যন্ত মোটরসাইকেলে চড়ে সারা সাতক্ষীরা ঘুরে বেড়িয়েছিলাম। ভাঙাচোরা, খানাখন্দকে ভরা রাস্তায় সেই সময় শুনেছিলাম, উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে দেশ। আমি প্রশ্ন করেছিলাম, উন্নয়নের সেই ছিটে ফোঁটা পানি কি সাতক্ষীরায় আসে না? সেদিন জনগণ বলেছিল- বর্তমান শাসকগোষ্ঠী সাতক্ষীরাকে বাংলাদেশের অংশ মনে করে না। সাতক্ষীরার উপর তারা জুলুম করেছে। সাতক্ষীরার জনগণের অধিকার দেয়নি। মানুষকে হত্যা করেছে, গুম করেছে, নির্যাতন চালিয়ে পঙ্গু বানিয়েছে, ইজ্জতের উপর হাত দিয়েছে, সম্পদ লুট করেছে এবং মানুষকে তাদের দাশে পরিণত করেছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল সাতক্ষীরার।
ডাক্তার শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এই জমিনে আমরা ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমরা দুর্নীতিমুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমরা সুষমা উন্নয়ন মানুষকে উপহার দিতে চাই। আমার জেলায় প্রধানমন্ত্রী আছে বলে সব কিছু জোয়ারের পানিতে চলে আসবে- এই বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই না। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যে বাংলাদেশে বেকারের মিছিল হবে না।
যুবকেরা আমাদের সম্পদে পরিণত হবে। তাদের হাতে মূল্যহীন এক টুকরা সার্টিফিকেট ধরিয়ে দেওয়া হবে না। শিক্ষা সমাপনীর সাথে সাথে তাদের হাতে কাজ তুলে দেওয়া হবে। শিক্ষা চাই এবং শিক্ষিত জাতি চাই। তবে এই শিক্ষা অবশ্যই নৈতিক এবং জাগতিক শিক্ষার সমন্বয়ে হতে হবে। শিক্ষা নিয়ে মানবজাতির ডাকাত না হয়, আমরা সেই শিক্ষাটি চাই। আমরা এমন একটি দেশ চাই, যে দেশে মা-বোনেরা নিশ্চিন্তে ঘরে নিরাপদে সুরক্ষিত থাকবেন, কর্মস্থলে সুরক্ষা পাবেন, রাস্তাঘাটেও সুরক্ষা পাবেন। তাদের দিকে কোন খারাপ লোক চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাবে না। তাদের দক্ষতা দিয়ে দেশের উন্নয়নে তারাও ভূমিকা রাখবে। এদেশে ইসলাম কায়েম হলে মা-বোনেরা সম্মানের পোশাক পরিধান করবে।
আমিরে জামায়াত ডাক্তার শফিকুর রহমান বলেন, এদেশে শুধু মুসলমানেরা বসবাস করে না, অন্যান্য ধর্মের মানুষ বসবাস করেন। কিন্তু কারোর উপর জোর জুলুম করা হবে না। কাউকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করা হবে না। ইসলামের সৌন্দর্য দেখে যদি কেউ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে, সেটা ভিন্ন কথা। আমরা এমন একটি দেশ চাই, যে দেশে মসজিদ, মন্দি এবং মঠ পাহারা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। গির্জা পাহারা দেওয়া লাগবে না।
সকল ধর্মের লোকেরা তাদের আপন আপন ধর্ম তাদের মত করে শান্তিপূর্ণভাবে নিরাপত্তার সাথে পালন করতে পারবে। আমাদের দেশটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি চমৎকার বাগান।কিন্তু আমাদের বাগানে মাঝে মাঝে হুতুম পেঁচা চাটি মারে। এই হুতুম পেঁচা থেকে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা এই সম্প্রীতি নষ্ট করতে দেব না। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, যেখানে মানুষকে তার শিক্ষা এবং কাজের ধরন দেখে মর্যাদা দেওয়া হবে না। বরঞ্চ প্রত্যেকটি মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে তার মর্যাদা দেয়া হবে। আমরা চাই আত্মীয় স্বার্থে দল এবং ধর্মের উর্ধ্বে উঠে আমরা সবাই এক। ইস্পাত কঠিন জাতীয় ঐক্য আমরা চাই।
২৪ এর স্বাধীনতা এমনি এমনি আসেনি ভাই, এর জন্য অনেক রক্ত দিতে হয়েছে। ৫৭ জন দেশ প্রেমিক অফিসারকে খুন করা হয়েছে। পহেলা জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত খুনের বন্যায় বাংলাদেশকে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে এসেছিল। তাদের হাতে কোন আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। এমনকি তাদের হাতে কোন ইট-পাটকেলও ছিলনা। তারা শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় নেমেছিল। কোটা সংস্কারের জন্য, কোটা বাতিলের জন্যও নয়। তারা বলেছিল, যৌতিক কোটা দেন আমাদের কোন আপত্তি নাই। কিন্তু কোটার নিয়ে জাতির সঙ্গে তামাশা করবেন তা আমরা মানবো না। এরপর একদিকে সরকারি বাহিনীকে নামিয়ে দেওয়া হলো অন্যদিকে সরকারের গুন্ডাবাহিনীকেও নামিয়ে দেওয়া হলো। এই উভয় পক্ষের আঘাতে জর্জরিত হয়ে দেড় হাজারের কম বেশি আদম সন্তান ক্ষুদ্র সময়ের মধ্যে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যারা জালিমের জুলুমের শিকার হয়ে মারা গেছেন আল্লাহ যেন তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করেন।
আমাদের উপর জুলুম করা হয়েছে, দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাইনি। যারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় তারা দেশকে ভালোবাসে না। দেশের প্রতি যাদের দায়বদ্ধ নেই তারা যে কোনো সময় দেশকে খোদা হাফেজ বলতে পারে। আমরা বলবো না। আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ যে তিনি এমন একটি সুন্দর দেশে আমাদেরকে পয়দা করেছেন। আমরা এই দেশ নিয়ে বাঁচতে চাই।
এদেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে চাই এবং এই দেশকে আমরা দুনিয়ার একটি শ্রেষ্ঠ দেশে পরিণত করতে চাই। এই সংগ্রামের দায়িত্ব আপনাদেরকে নিতে হবে। আজ সারা বাংলাদেশ থেকে গর্জন উঠেছে, প্রয়োজনে জীবন দেব কিন্তু এক ইঞ্চি মাটি হায়েনাদের হাতে ছেড়ে দেব না। আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। বাংলাদেশের দায়িত্ব যুব সমাজের হাতে তুলে দিতে চাই। এই যুব সমাজই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ।
যে যেদিক থেকে উস্কানি দিক না কেন, কারও উস্কানিতে আমরা কান দেবো না। তিনি সকলকে ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার আহ্বান জানান।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্মী সম্মেলনে উন্নয়নের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, জেলা আমীর উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল, নায়েবে আমীর শেখ নুরুল হুদা, সেক্রেটারী মাওলানা আজিজুর রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
এর আগে শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাত ১০টায় সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজে স্থানীয় চিকিৎসক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিকদসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন।
আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান শনিবার সকাল ৯টায় সাতক্ষীরা পল্লীমঙ্গল স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের রোকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। পরে তিনি বেলা ২টায় সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।